মোঃ আব্দুল মোমিন উপজেলা প্রতিনিধি রাজনগর:
সিলেট কারো কাছে আধ্যাত্মিক নগরী,কারো কাছে চায়ের দেশ,কেউবা বলেন দ্বিতীয় লন্ডন,আবার কারো চোখে প্রকৃতি কন্যা।এমন ভিন্ন ভিন্ন নামে দেশ-বিদেশে সিলেটের পরিচিতির ও ভিন্ন মতের যৌক্তিকতা। নয়ন অবিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট জেলার আনাচে-কানাচে রয়েছে অনেক আকর্ষণীয় স্থান। জাফলং,বিছনাকান্দি,পান্তমা এবং রাতারগুল। বর্তমানে এগুলো পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য। হযরত শাহজালাল এর পূর্ণভূমি হাছন রাজা কিংবা বাউল সম্রাট আব্দুল করিমদের স্মৃতি বিজড়িত জেলা সিলেট। এখানে পাখির কিচিরমিচির,কোলাহলমুক্ত পরিবেশ,সবুজ খেত,ঘন অরণ্য আবার কোথাও কোথাও পর্বতমালা। এইসব দেখে যে কেউ হয়ে উঠবে আনমনা। প্রকৃতির আশীর্বাদ পুষ্ট সিলেটের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য জেনে আসা যাক।১৮৭৪ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা ছিল ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।১৮৭৪ সনের ১২ই সেপ্টেম্বর ভারতের নবদৃষ্ট আসাম প্রদেশের সঙ্গে সিলেটকে সংযুক্ত করা হয়।
এরপর সিলেট পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৭৮ সালে। ১৯ ৪৭ সালের আগ পর্যন্ত বঙ্গ ভঙ্গের সময়টুকু বাদ দিলে সিলেট আসামেরই একটি অংশ ছিল।১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়। ১৯৮৩ /৮৪ সালে প্রশাসনিক পূর্ণ গঠনের সময় বৃহত্তর সিলেট জেলাকে চারটি নতুন জেলা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, এবং মৌলভীবাজারে বিভক্ত করা হয়। এরপর ১৯৯৫ সনের পহেলা আগস্ট সিলেট দেশের ষষ্ঠ বিভাগ হিসেবে মর্যাদা পায়। পাহাড়, হাওর আর বনের বৈচিত্রে আলোকিত সিলেটের নামকরণ নিয়েও রয়েছে নানা মত আর উপকথা। তবে সবচেয়ে প্রচলিত ধারণাটি হল শিলা মানে পাথর, আর পাথরের প্রাচুর্যের কারণে এই এলাকার নাম সিলেট। এই ধারণার পালে আরেকটু হাওয়া দিয়ে বলা হয়ে থাকে সিলেট শব্দের অনুসর্গঃ সিল মানে সিলা বা পাথর। আর উপসর্গঃ হেইট মানে হাট বা বাজার। প্রাচীনকাল থেকে এই জেলায় পাথর এবং হাটের আধিক্য থাকায় শব্দ দুটি মিলে সিলেট নামের উৎপত্তি।
“দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ভারতের সীমান্ত ঘেসা সিলেট জেলার বর্তমান আয়তন ৩ হাজার ৪৯০ বর্গ কিলোমিটার। ১৩ টি উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেটে প্রায় ৩৬ লক্ষ মানুষের বাস। শুধু পর্যটনে নয় দেশের অর্থনীতিতেও সিলেটের অবদান অসামান্য”
এই জেলায় বিপুলসংখ্যক লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হিসেবে কাজ করছেন। তাদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের রিজার্ভ কে রাখছে চাঙ্গা। সিলেটের পাথর ও বালির গুণগত মান দেশের অন্যান্য জেলা থেকে এগিয়ে। এছাড়াও সিলেটে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে। যা সারা দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে ও সিলেট জেলার ভূমিকা ছিল দৃশ্যমান।মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি উসমানী এ জেলার কৃতি সন্তান। সিলেট আরো অনেক গুণী ব্যক্তির জন্ম দিয়েছে। অভিনেতা সালমান শাহ এবং উপমহাদেশের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার জন্ম সিলেটের মাটিতেই। এছাড়া সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ শমসের মুবিন চৌধুরী ও সাবেক ফুটবলার আলফাজ আহমেদ বেড়ে উঠেছেন সিলেট জেলায়। শিক্ষা ক্ষেত্রেও সিলেটে এসেছে আমূল পরিবর্তন। গত এক যুগে শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নে এই জেলায় ব্যায় করা হয়েছে হাজার কোটি টাকারও বেশি। সিলেটে খোলা আকাশের নিচে কিংবা ভাঙা দেয়াল, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের দৃশ্য এখন অতীত।অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একাডেমিক ভবন।
দৃষ্টিনন্দন ভবনের পাশাপাশি রয়েছে আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও কম্পিউটার ল্যাব। সিলেটে আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সবুজ পাহাড় টিলা আর নয়ন অবিরাম চা বাগানের মনোরম পরিবেশ বেষ্টিত এই স্টেডিয়াম টি ইতিমধ্যে দেশের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামের তকমা পেয়েছে। সুশৃংখল পরিবেশের
কারণে বাংলাদেশের যেকোনো অঞ্চল থেকে বসবাসের জন্য সিলেট কে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করা হচ্ছে। নয়ন অবিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ ইতিহাস ঐতিহ্য বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতি ও দৃষ্টিনন্দন জীবনাচারের জন্য সিলেটের তুলনা হয়না বলেই চলে।
Leave a Reply