স্টাফ রিপোর্টার:
অবিলম্বে বহরপুর জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যবাহী মন্দির জবরদখলের পায়তারাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন মানবাধিকার সম্মিলিত জোট কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মু. নজরুল ইসলাম তামিজী।
তিনি গত ২৭ অক্টোবর ২০২৩ শুক্রবার সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ভূমিদস্যুরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এবং আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ভিন্নধারায় প্রভাবিত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
জোটের অন্যতম সদস্য মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসার পরিচালনায় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জাগ্রত মহানায়ক শিহাব রিফাত আলম, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. এ জলিল, বাবু স্বপন কুমার সাহা, শহীদুন্নবী ডাবলু, পল্টন দাস, হুমায়ুন কবির, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বহরপুর জমিদারবাড়ির সন্তান সুব্রত কুমার সাহা, রুপ কুমার সাহা, জীবন কৃষ্ণ সাহা, পুত্রবধু হিরা রানি সাহা, লিপি রানী সাহা, চন্দন কুমার সাহা, শুভ সাহা। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রক্তদাতা মোঃ জাভেদ নাছিম, মোস্তাক ভাসানী, অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তারা বলেন, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের সাড়ে ৩’শ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়ী দখলের চেষ্টা সহ বাড়ীর মালিকদের ৪ জনকে পিটিয়ে জখম এবং স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী জমিদারবাড়ী পরিবারের পক্ষ থেকে রাজবাড়ীর ৪ নং আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মৌসুমী সাহা মামলাটি থানায় রেকর্ড করার জন্য বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে প্রকাশ, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে বহরপুরের পুরনো ওই জমিদারবাড়ী সহ পুকুর ও মন্দির দখলের পায়তারা করতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে গত ১৩ অক্টোবর দুপুরে বহরপুর এলাকার মৃত আজিজ সেখের পুত্র মোঃ জিল্লু শেখ ও রামগোপাল সাহার স্ত্রী লক্ষী রানী সাহা অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন সন্ত্রাসী নিয়ে ওই জমিদার বাড়ীতে হানা দেয়। এসময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বাড়ীর সকলকে ভয়- ভীতি প্রদর্শন করে এবং তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা প্রথমে জমিদারবাড়ীর মৃত অমরেন্দ্র সাহার পুত্র কৃষ্ণ কান্ত সাহাকে (৪৩)
মারপিট করে। এরপর বাড়ীর অন্যান্য সদস্যরা ঠেকাইতে আসলে সন্ত্রাসীরা কৃষ্ণ কান্ত সাহার স্ত্রী সুমি সাহা পোদ্দার (৩২), তার কাকা সতীনাথ সাহা (৫৭) ও পিসি বৃদ্ধা নীলিমা রাণী সাহাকে (৬৯) মারপিট ও গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। আহতদেরকে বালিয়াকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও চিকিৎসা করানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সন্ত্রাসীদের হামলা ও মারপিটে জমিদার বাড়ীর অধিকাংশ সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সুযোগে ওইদিন (১৩অক্টোবর) রাত ৯ টার দিকে বহরপুর এলাকার মোঃ জিল্লু শেখ এর নেতৃত্বে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী পুনরায় ওই বাড়ীতে হানা দিয়ে বাড়ীর পুত্রবধূ সুমি সাহাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ওই গৃহবধূর ঘরের স্টীলের বাক্সের তালা ভেঙ্গে আনুমানিক ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ৩ ভরি ওজনের একজোড়া বালা ও ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ আনা ওজনের একজোড়া কানের দুল সহ জমিদারি আমলের জমিজায়গার মূল্যবান কাগজপত্র নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বুধবার (১৮ অক্টোবর) জমিদারবাড়ীর আরেক পুত্রবধূ হীরা রাণী সাহা নিজে বাদী হয়ে রাজবাড়ীর ৪ নং আমলী আদালতে বহরপুরের মৃত আজিজ শেখের পুত্র মোঃ জিল্লু শেখ ও মৃত রামগোপাল সাহার স্ত্রী লক্ষী রাণী সাহা সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে আসামী করে দন্ডবিধির ১৪৭/৩২৩/৩২৪/৩০৭/৩৭৯/ ৩৯৫/৪৫২/৫০৬(২) ধারায় একটি মামলা (সিআর-৩৭৯/২৩) দায়ের করে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এফআই’র হিসেবে রেকর্ড করার জন্য বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পুরনো ওই জমিদার বাড়ী সহ সংলগ্ন এলাকায় বর্তমানে ১ একর ৮৫ শতাংশ জমি রয়েছে। এর মধ্যে একজন উত্তরাধিকারী তার মালিকানাধীন ৪৬ শতাংশ জমি ইতোমধ্যে অন্যত্র বিক্রয় করেছে। অবশিষ্ট জমি বালিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান সহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে মাপঝোঁক করে বাড়ীর অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরও প্রভাবশালী একটি মহল নানাভাবে ওই বাড়ীর জমি, নাট মন্দির ও পুকুর দখলের পাঁয়তারা করে আসছে। ওই জমি যাতে কেউ বেদখল করতে না পারে সেজন্য জমিদার বাড়ীর মৃত অমরেন্দ্র সাহার পুত্র সুব্রত কুমার সাহা রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪/১৪৫ ধারায় একটি মামলা (মিসপি-২৮২/২০২৩) দায়ের করেন। এরপরও সন্ত্রাসীরা ওই বাড়ী সহ পুকুর ও নাট মন্দির দখলের পায়তারা ও বাড়ীর পুত্রবধূ সহ অন্যান্যদের মারপিট করে।
বুধবার রাজবাড়ীর ৪ নং আমলী আদালতে রাজবাড়ী জেলা বারের যুগ্ম সম্পাদক এ্যাড. খান মোঃ জহুরুল হক, এ্যাড. শাহরিয়ার জামান রাজীব ও এ্যাড. আব্দুল্লাহ আমান বাদী পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন। এছাড়াও বক্তারা ঢাকেশ^রী মন্দিরের দুর্নীতি বন্ধের জন্য জোর দাবী জানান।
আগামী ২৯ শে অক্টোবর রবিবার প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে ঘোষনা দেওয়া হয় এবং আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে চিহ্নিত আসামীদের গ্রেফতার করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়।
Leave a Reply